Friday, June 15, 2012

সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ


সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ


সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ
Waliulla.jpg
সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ
পেশা
ঔপন্যাসিক, গল্পকার, কবি ও সাহিত্য সমালোচক
জাতীয়তা
Flag of Bangladesh.svgবাঙালি
নাগরিকত্ব
কার্যকাল
পুরস্কারসমূহ
সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ (আগস্ট ১৫, ১৯২২ - অক্টোবর ১০, ১৯৭১) আধুনিক বাঙালা সাহিত্যের এক স্তম্ভপ্রতিম কথাশিল্পী কল্লোল যুগের ধারাবাহিকতায় তাঁর আবির্ভাব হলেও তিনি ইয়োরোপীয় আধুনিকতায় পরিশ্রুত নতুন সাহিত্য বলয়ের শিলান্যাস করেন জগদীশ গুপ্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের উত্তরসূরী এই কথাসাহিত্যিক অগ্রজদের কাছ থেকে পাঠ গ্রহণ করলেও বিষয়, কাঠামো ও ভাষা-ভঙ্গীতে নুতন এক ঘরানার জন্ম দিয়েছেন

পরিচ্ছেদসমূহ

জন্ম ও পরিবার

তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহর এলাকায়, ১৯২২ খ্রীস্টাব্দের ১৫ আগস্ট তাঁর পিতা সৈয়দ আহমাদুল্লাহ ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা ; মা নাসিম আরা খাতুনও সমতূল্য উচ্চশিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবার থেকে এসেছিলেন, সম্ভবত অধিক বনেদি বংশের নারী ছিলেন তিনিওয়ালিউল্লাহর আট বছর বয়সের সময় তার মাতৃবিয়োগ ঘটেদুই বছর পর তার বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের করটিয়ায়বিমাতা এবং বৈমাত্রেয় দুই ভাই ও তিন বোনের সঙ্গে ওয়ালিউল্লাহর সম্পর্ক কখনোই অবনতি হয়নিতার তেইশ বছর বয়সকালে কোলকাতায় চিকিৱসা করতে গিয়ে মারা যানতার পিতৃমাতৃবংশ অনেক শিক্ষিত ছিলেনবাবা এম এ পাশ করে সরাসরি ডেপুটি মেজিস্ট্রেট চাকুরিতে ঢুকে যান; মাতামহ ছিলেন কোলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে পাশ করা আইনের স্নাতক; বড়ো মামা এমএবিএল পাশ করে কর্মজীবনে কৃতী হয়ে খানবাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন এবঙ স্ত্রী ওয়ালিউল্লাহর বড়ো মামী ছিলেন নওয়াব আব্দুল লতিফ পরিবারের মেয়ে, উর্দু ভাষার লেখিকা ও রবীন্দ্রনাথের গল্প নাটকের উর্দু অনুবাদক

শিক্ষা

পারিবারিক পরিমন্ডলের সাংস্কৃতিক আবহাওয়া সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর মনন ও রুচিতে প্রভাব ফেলেছিলোপিতার বদলীর চাকরীর সুবাদে ওয়ালিউল্লাহ পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অংশ দেখার সুযোগ লাভ করেনওয়ালিউল্লাহর শিক্ষাজীবন কেটেছে দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে১৯৩৯ সালে তিনি কুড়িগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক, এবং ১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেনতার আনুষ্ঠানিক ডিগ্রী ছিলো ডিস্টিঙ্কশনসহ বিএ এবঙ অর্থনীতি নিয়ে এমএ ক্লাশে ভর্তি হয়েও শেষে পরিত্যাগ করেন ছাড্রজীবনে তিনি একাধিক মাসিকপত্রে লেখালেখির সাথে জড়িত ছিলেনপাকিস্তান সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাথে জড়িত থাকার সূত্রে কর্মজীবনের বড় একটা সময় তিনি বিদেশে কাটান১৯৫৫ সালে তিনি ফরাসী আন মারী-র সাথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন

কর্মজীবন

পঠদ্দশাতেই সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ কর্মজীবনে প্রবেশ করেনবাধ্য হয়ে নয়, স্ব-ইচ্ছায়তার জ্যেষ্ঠভ্রাতা সৈয়দ নসরুল্লাহ এমএ ও বিএ পাশ করেছিলেন তার পক্ষেও খুব স্বাভাবিক ছিলো এমএ পড়াটাকিন্তু হয়নি১৯৪৮ সালে তিনি ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় চাকুরি নেনএ বছর তার পিতাও প্রয়াত হন (২৬ জুন)তার তিনমাস আগে, মার্চ মাসে, তার প্রথম গ্রন্থ নয়নচারা গল্পগ্রন্থ বের হয়নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেছিলেন ১৯৪১-৪২ সাল নাগাদ এমন মনে করার সঙ্গত কারণ আছে যে,তিনি ভবিষ্যতে লেখকবৃত্তি বেছে নিতে চেয়েছিলেন১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরই তিনি দ্য স্টেটসম্যান এর চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকা চলে আসেন এবং সেপ্টেম্বরে রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের সহকারী বার্তা-সম্পাদকের চাকুরি নেনকাজের ভার কম ছিলো, লালসালু উপন্যাস লেখায় হাত দিলেন নিমতলীর বাসায়পরের বছরই এ উপন্যাস গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে কমরেড পাবলিসার্সঢাকা থেকেই বের হলোকরাচি কেন্দ্রের বার্তা সম্পাদক হয়ে ঢাকা ছাড়েন ১৯৪৮ সালেসেখান থেকে নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসে তৃতীয় সেক্রেটারির পদমর্যাদায় প্রেস-আতাশে হয়ে যান ১৯৫১ তেঅতঃপর একই পদে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বদলি ১৯৫২ এর শেষের দিকে১৯৫৪ সালে ঢাকায় ফিরে এলেন তথ্য অফিসার হিসেবে ঢাকাস্থ আঞ্চলিক তথ্য-অফিসে১৯৫৫ সালে পুনরায় বদলি করাচির তথ্য মন্ত্রনালয়েএরপর ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার তথ্য পরিচালকের পদাভিষিক্ত হয়ে, ১৯৫৬ সালের জানুয়ারিতে, দেড় বছর পর পদটি বিলুপ্ত হয়ে গেলে জাকার্তার পাকিস্তানি দূতাবাসে দ্বিতীয় সেক্রেটারির পদমর্যাদায় প্রেস-আতাশে হয়ে রয়ে গেলেন ১৯৫৮ এর ডিসেম্বর অবধিএরপর ক্রমান্বয়ে করাচি-লন্ডন-বন, বিভিন্ন পদে ও বিভিন্ন মেয়াদে১৯৬১ সালের এপ্রিলে ফার্স্ট সেক্রেটারির পদমর্যাদায় প্রেস-আতাসে হিসেবে যোগ দিলেন পারীর দুতাবাসেএকনাগারে ছ'বছর ছিলেন তিনি এ শহরেএরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিলো লালসালুর ফরাসি অনুবাদ লারব্র্ সা রাসিন (L'arbre sans racines, অর্থাৎ শিকড়হীন গাছ)দূতাবাসের চাকুরি ছেড়ে চুক্তিভিত্তিক প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট পদে যোগ দেন ইউনেস্কোতে, ১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট, চাকুরিস্থল ছিলো প্যারিস শহরেই, ইউনেস্কো সদরদপ্তরে১৯৭০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইউনেস্কোতে তার চাকুরির মেয়াদ শেষ হয়েছিলোঅবসরগ্রহণের নিয়ম হিসাবে পাকিস্তান সরকার ইসলামাবাদে বদলি করে কিন্তু তিনি প্যারিসেই থেকে গিয়েছিলেন

বিবাহ ও সন্তানাদি

তার স্ত্রী ফরাসিনীনাম: আন্-মারি লুই রোজিতা মার্সেল তিবোতাদের আলাপ হয়েছিলো সিডনিতেওয়ালিউল্লাহ যেমন পাকিস্তানি দূতাবাসে, আন্-মারি তেমনি ছিলেন ফরাসি দূতাবাসেদেড়-দু বছরের সখ্য ও ঘনিষ্টতা রূপান্তরিত হয় পরিণয় বন্ধনেওয়ালিউল্লাহ তখন করাচিতেসেখানেই ১৯৫৫ সালের ৩ অক্টোবর তাদের বিয়ে হয়ধর্মান্তরিতা বিদেশিনীর নাম হয় আজিজা মোসাম্মত নাসরিন নবলব্ধ নামকে বিয়ের কাবিননামাতেই বিসর্জন দিয়েছিলেন দু-জনেতাদের দু সন্তানপ্রথমে কন্যা সিমিন ওয়ালিউল্লাহ, তার পরে পুত্র ইরাজ ওয়ালিউল্লাহ

জীবনাবসান

অত্যন্ত অকালে প্রয়াত হন সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহমাত্র ৪৯ বছর বয়সে, ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে তাঁর মৃত্যু হয়, গভীর রাতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয়পারী'র উপকণ্ঠে তারা একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, সেখানেই ঘটনাটি ঘটে এবং ওখানেই সমাহিত করা হয় তাকে

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

প্রধান ক্ষেত্র
গোত্র
মাধ্যম
অভিনয় (নাট্যমঞ্চ বা থিয়েটার) · বই
কৌশল
ইতিহাস এবং তালিকা
আলোচনা
সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ রাজনীতিসম্পৃক্ত মানুষ ছিলেন না, কিন্তু সমাজ ও রাজনীতিসচেতন ছিলেনবাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চাকরিহীন, বেকার তা সত্ত্বেও বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করেছেন, সঙ্গতিতে যতোটুকু কুলোয় তদনুযায়ী টাকা পাঠিয়েছেন কোলকাতায় মুক্তিযুদ্ধ তহবিলেতার সন্তানদের ধারণা, তাদের পিতার অকাল মৃত্যুর একটি কারণ দেশ নিয়ে দুশ্চিন্তা, আশঙ্কা ও হতাশাতিনি যে স্বাধীন মাতৃভূমি দেখে যেতে পারেননি সে বেদনা তার ঘনিষ্ঠ মহলের সকলেই বোধ করেছেনতার ছাত্রজীবনের বন্ধু পরবর্তীতে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, আবু সাঈদ চৌধুরী ওয়ালিউল্লাহ'র মৃত্যুর সাত মাস পরে তার স্ত্রীকে এক আধা সরকারি সান্তনাবার্তা পাঠিয়েছেনতাতে লেখা ছিলো,
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, মি. ওয়ালিউল্লাহর মাপের প্রতিভার সেবা গ্রহণ থেকে এক মুক্ত বাংলাদেশে বঞ্চিত হলো; আমাকে এটুকু বলার সুযোগ দিন যে আপনার ব্যক্তিগত ক্ষতি বাংলাদেশ ও বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষতি

গ্রন্থতালিকা

উপন্যাস

  • লালসালু ,শ্রাবণ ১৩৫৫/ জুলাই, ১৯৪৯; ঢাকা
  • চাঁদের অমাবস্যা, ১৯৬৪; ঢাকা
  • কাঁদো নদী কাঁদো, মে, ১৯৬৮; ঢাকা

ছোটগল্প

  • নয়নচারা, চৈত্র্, ১৩৫১/ মার্চ, ১৯৪৫; কোলকাতা
  • দুই তীর ও অন্যান্য গল্প, আগস্ট, ১৯৬৫; ঢাকা

নাটক

  • বহিপীর, ১৯৬০ ; ঢাকা
  • তরঙ্গভঙ্গ, আষাঢ়, ১৩৭১/ জুন,১৯৬৫; ঢাকা
  • সুড়ঙ্গ, এপ্রিল, ১৯৬৪; ঢাকা

রচনাবলি

  • গল্প-সমগ্রমার্চ, ১৯৭২; কোলকাতা
  • সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ-রচনাবলি: ১ (সম্পা. সৈয়দ আকরাম হোসেন)১৯৮৬; ঢাকা
  • সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ-রচনাবলি: ২ (সম্পা. সৈয়দ আকরাম হোসেন)১৯৮৭; ঢাকা

পুরস্কার

  • একুশে পদক (মরণোত্তর), ১৯৮৪
  • আদমজী পুরস্কার, ১৯৬৫ সালে, 'দুই তীর ও অন্যান্য গল্প'-এর জন্য
  • বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬১ সালে উপন্যাসে বিশেষ অবদানের জন্য
  • পি.ই.এন পুরস্কার পান 'বহিপীর' নাটকের জন্য, ১৯৫৫ সালেঢাকায় পি.ই.এন ক্লাবের উদ্যোগে এক আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে বাঙলা নাটকের প্রতিযোগিতায় 'বহিপীর' দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে পুরস্কৃত হয়

তথ্যসূত্র

  • হায়াত মাহমুদের লেখা 'সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর জীবনপঞ্জি'

বহি:সংযোগ


No comments:

Post a Comment